মাদরাসা পরিচিতি

প্রতিষ্ঠানের নাম: আল জামিআতুল আরাবিয়া রাহিলিয়া দারুল উলূম, মাদরাসাপাড়া, সাতগাড়া, মহানগর, রংপুর।

প্রতিষ্ঠাকাল: সর্ব প্রথম ০১-০১-২০১৩ ইং সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠাতা: মুফতি বিলাল আহমাদ কাসিমী।

প্রতিষ্ঠাতা: মুফতি বিলাল আহমাদ কাসিমী।

স্থান ও জায়গার পরিমাণ: রংপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে পর্যটন মোটেল সংলগ্ন টেক্সটাইল মোড় থেকে সামান্য পশ্চিমে, মাদরাসাপড়া, সাতগাড়ায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠার শুরু লগ্নে মাদরাসার নিজস্ব কোনো জায়গা ছিলো না, তাই সাতগাড়া জামে মসজিদের দ্বিতীয় তালায় (সবেমাত্র ছাদ হয়েছে, জানালা দরজা তখনও লাগানো হয়নি) কয়েকজন বাচ্চাকে নিয়ে প্রথম সবক শুরু হয়। এখানে প্রায় দুই বছর মাদরাসা চলতে থাকে। এরপর আল্লাহর এক বান্দা আলহাজ্ব আনোয়ারুল হক সাহেব তার ১০শতক জায়গা থেকে চার শতক জায়গা দান করেন, সেখানে প্রথমে ছোট একটি টিনসেড ঘর তৈরি করা হয়। এর এক থেকে দেড় বছর পর তিনি আরো চার শতক জায়গা দান করেন। আর বাকি দুইশতক ক্রয় করা হয়। রাহিলি বেগম যার নামে মাদসার নামকরণ হয় তার সন্তানেরা মায়ের নামে পনে চার শতক জায়গা দান করেন। এরপর আলহাজ্ব মোবাশ্বের আলী সাহেব ৫শতক জায়গা দান করেন আর অন্যান্য জমিগুলি ক্রয় করা হয়। বর্তমানে মাদ্রাসার মোট জমির পরিমাণ: ৩৮শতাংশ

মাদরাসার বিভাগসমূহ: এ মাদরাসায় একাধিক বিভাগ আছে।

১. নূরানী একাডেমী বিভাগ: এখানে এলাকার ও আশপাশের ছোট ছেলে-মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হয়। এটি জেনারেল ও ইসলামিক শিক্ষার সমন্বয়ে তৈরি সিলেবাস। প্লে শ্রেণী থেকে ক্লাস থ্রী পর্যন্ত পড়ানো হয়। বাংলা, ইংরেজী ও গণিতের পাশাপাশি দু‘আ, দরুদ, সহীহ শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত, নিত্য দিনের দু‘আ, প্রয়োজনীয় মাসাইল, নামায, জানাযার নিয়ম-কানুন ইত্যাদি শিক্ষা দেয়া হয়।

২. মকতব বিভাগ: এ বিভাগে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে আসা বা”চাদের নেয়া হয়। এখানে শুদ্ধরূপে কুরআন মাজীদ ও প্রয়োজনীয় দু‘আ-মাসাইল শিক্ষা দেয়া হয়।

৩. নাযিরা বিভাগ: মকতব থেকে উত্তির্ণ বা”চাদের আরো সুন্দর লাহানে কুরআন মাজীদ দেখে দেখে কয়েক খতম করানো হয় এবং হিফযের উপযোগী করে তোলা হয়।

৪. হিফয বিভাগ: নাযিরা সম্পূর্ণ করা বাচ্চাদের পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবি ছাত্রদের নেয়া হয়। মেধা অনুযায়ী এক থেকে তিন বছরে একটি ছাত্র হিফ্জ তথা পূর্ণ কুরআন শরীফ মুখস্ত করতে পারে।

৫. কিতাব বিভাগ: দীর্ঘ নয় বছরের কোর্স শেষে দাওরায়ে হাদীছ পাস করলে বর্তমানে সরকারি স্বীকৃতি অনুযায়ী এম এ পাস হয় আর আরবী পরিভাষায় মাওলানা বা আলিম বলা হয়।

৬. ইফতা-মুফতি কোর্স: দাওরায়ে হাদীছ পাস ছেলেদের থেকে বাছাইকৃত মেধাবি কিছু ছাত্র নেয়া হয়। এক বছর মেহনত করে এ ডিগ্রি অর্জন করে। এখানে মূলত মানুষের সব বিষয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয় তার শরঈ সমাধান কুরআন, সুন্নাহর মাধ্যমে দেয়ার যোগ্যতা তৈরি করানো হয়।

৭. আরবী সাহিত্য বিভাগ: এখানে আরবী সাহিত্যের ওপর পারদর্শী করে তোলা হয়। পূর্ণ এক বছর কোর্স।

৮. তাফসীর বিভাগ: কুরআনে কারীমের তাফসীর শিখানো হয়, এখানেও এক বছর সময় দিতে হয়।

৯. নাহউ ও সরফ কোর্স: আরবী গ্রামারে দুর্বল ছাত্রদের এক বছর মেয়াদিতে বিভিন্ন কৌশল প্রাক্টিক্যালের মাধ্যমে মজবুত ও দক্ষ বানানো হয়।

১০. দাওয়া ওয়াল ইরশাদ বিভাগ: বিভিন্ন সময় সমসাময়িক বিষয়ে মানুষকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রচারের মাধ্যমে, বক্তৃতার মাধ্যমে আর কখনো সেমিনারের মাধ্যমে।

১১. ফিরাকে বাতিলা বিভাগ: যুগে যুগে পথচুত, বিভ্রান্তসৃষ্টিকারী, বাতিল আকীদা পোষণকারী ভ্রান্ত মতবাদের ধৃষ্টতা চলে আসছে। তাদের ফিতনা থেকে উম্মত কীভাবে বাঁচতে পাারে সে জন্য প্রথমে তাদের আকীদা-চিন্তা-চেতনা ও কর্মপন্থা, তাদের ভুল দলীলসমূহ সম্পর্কে অবগত হতে হয়, একজন দক্ষ ও পথপ্রদর্শক আলিম হওয়ার জন্য বিষয়গুলি খুবই গুরত্ত¡পুর্ণ। তাই প্রতি বৃহস্পতিবার করে এ বিষয়ে তা’লীম দেয়া হয়। এতে তাদের আকীদা ও তার খন্ডন শিক্ষা দিয়ে একেকটি ছাত্রকে উম্মতের চেরাগ ও আলোর দিশারি করে তৈরি করা হয়।

১২. ফিকহি সেমিনার: প্রতি মাসে এক দিন (মাসের প্রথম শনিবার) বিভিন্ন ব্যবসায়ী, উলামা, ইমাম, খতীবদের নিয়ে চলমান বিভিন্ন মাসয়ালার ওপর আলোচনা করে উম্মতকে হারাম ও ভ্রান্তি থেকে সতর্ক করে দিয়ে সঠিক মাসয়ালার আলোচনা করা হয়।

১৩. প্রকাশনা বিভাগ: আমল, আখলাক, দু‘আ দরুদ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা মূলক তথ্যবহুল ছোট কিতাব আকারে ছাপানো হয়। এতে করে সাধারণ মানুষ সঠিক মাসায়ালা সম্পর্কে অবগত হয়ে সঠিক আমল করতে সক্ষম হয়।

ছাত্র সংখ্যা: আমাদের প্রতিষ্ঠানে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় সীমিত সংখ্যায় ছাত্র ভর্তি নেয়া হয়। এরপরও বর্তমানে প্রায় পাঁচশত শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্ঠান থেকে দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ পাচ্ছে।

শিক্ষক ও কর্মচারি সংখ্যা: বর্তমানে জামিআর শিক্ষক ও কর্মচারি সংখ্যা: ১৯জন।

মাদরাসার আয়ের উৎস: এ প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট কোনো আয়ের উৎস নেই। সম্পূর্ণ তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ তথা আল্লাহর ওপর ভরসা করেই চলে। কোনো আল্লাহর নেক বান্দা-বান্দিগণ সহায়তা করতে চাইলে মাদরাসা তা গ্রহণ করে। বর্তমানে এভাবেই মাদরাসার যাবতীয় কাজের অর্থের জোগান হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের থেকে যতসামান্য কিছু বেতন নেয়া হয়।

ব্যায়ের খাতসমূহ: ক. উন্নয়ণমূলক কাজ।
খ. মেহমানদারি।
গ. কিতাব ক্রয়।
ঘ. প্রয়োজনীয় আসবাব ক্রয়।
ঙ. স্টেশনারি ক্রয়।
চ. জমি ক্রয় ও মাটি ভরাট।
ছ. শিক্ষক ও কর্মচারি অযিফা।
জ. বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ।
ঝ. গরিব ছাত্রদের চিকিৎসা, বোডিং ও অন্যান্য প্রয়োজনে অনুদান প্রদান।

মাদরাসার ফান্ড: মাদরাসায় দু‘টি ফান্ড আছে:
ক. সাধারণ ফান্ড: এ ফান্ডের জমা টাকা দিয়ে উপরোল্লেখিত ক-জ পর্যন্ত কাজে ব্যয় করা হয়।
খ. লিল্লাহ ফান্ড: এ ফান্ডে যাকাত, সদকা, মান্নাত, কুরবানীর চামড় বা তার মূল্য ইত্যাদি বিষয়ে প্রদত্ত টাকা জমা হয়। এ ফান্ডের টাকা শুধুমাত্র এতিম, গরিব ও অসহায়-অস্ব”ছল ছাত্রদের খানা, চিকিৎসা ও অনুদান বাবদ খরচ করা হয়।

হিসাব সংরক্ষণ পদ্ধতি: যে কোনো অনুদান রসিদ বই মুলে গ্রহণ করা হয়। সাধারণ ফান্ড, লিল্লাহ ফান্ড ও ছাত্রদের বেতনের জন্য আলাদা আলাদা রসিদ বই আছে।
প্রতিটি ব্যয়-খরচ ভাউচারের মাধ্যমে জমা হওয়ার পর তা খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয় এবং প্রতি মাসে আয়-ব্যয়ের হিসাব করে তা প্রকাশ করা হয় ও বাইরে লটকিয়ে রাখা হয়, যাতে করে যে কেউ হিসাব-কিতাবের ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে পারে।

মাদরাসার অতি প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়: আলহামদুলিল্লাহ হাটি হাটি পা পা করে অল্প সময়ে মাদরাসা কল্পনাতিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা একমাত্র আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমাত। দিন দিন যে পরিমাণে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে সে পরিমাণে মাদরাসায় সংকুলান নেই তাই

ক. মাদরাসার কিছু জমি বৃদ্ধি করা খুব প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আল্লাহর শুকরিয় মাদরাসার আশপাশে এখনো অনেক জমি খালি আছে। প্রয়োজনীয় জমে এখানে ক্রয় করা দরকার, নতুবা এগুলি হাত ছাড়া হলে পরবর্তীতে টাকা থাকলেও জায়গার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না।

খ. মাদরাসায় প্রায় পাঁচশত শিক্ষার্থীদের জন্য নামাযের নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। ছাত্রদের থাকার বিভিন্ন রুমে কয়েকটি জামাত করতে হয়, তাই মাদরাসায় একটি জায়গা ও বড় মসজিদের দরকার।

গ. শিক্ষার জন্য কিতাব অত্যান্ত গুরুত্তপূর্ণ বিষয়। কিতাব ব্যতিত পড়া শুনা অসম্ভব। এ লক্ষ্যে একটি বড় লাইব্রেরী ও কিছু কিতাব সংগ্রহ প্রয়োজন। আলহামদুলিল্লাহ বর্তমানে ছোট পরিসরে হলেও একটি লাইব্রেরী ও কিছু কিতাব সংগ্রহ শুরু হয়েয়ে। কিন্তু এটিকে আরেকটু উন্নত করতে এখনো প্রায় দশ লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন।